ঢাকা ১১:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ মার্চ ২০২৫, ২৭ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কালাইয়ে রাতভর চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে পাহারায় গ্রামবাসী

সুকমল চন্দ্র বর্মন, কালাই, জয়পুরহাট::

ছবি: চেকপোস্ট

জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। একের পর এক সংঘটিত অপরাধের পর প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে গ্রামবাসীরা নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন। গত ৭ মাস ধরে উপজেলার ১৪৮টি গ্রামে রাতভর লাঠিসোঁটা ও টর্চলাইট হাতে পাহারা দিচ্ছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে এবং এর পর থেকেই কালাই উপজেলায় একের পর এক ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরির ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, এবং প্রশাসনের কাছে সুরক্ষা প্রার্থনা করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

এ অবস্থায়, ১৪৮টি গ্রামের অধিকাংশ জায়গায় স্থানীয়দের উদ্যোগে পাহারাদার কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাত্র, যুবক, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ একযোগে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করেছেন। প্রতিটি পরিবারের অন্তত এক পুরুষ সদস্যকে পাহারায় নিয়োজিত করা হয়েছে। গ্রামবাসীরা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে, সন্দেহজনক লোকদের নজরদারি করছেন এবং প্রয়োজন হলে তাদের নাম-ঠিকানা লিখে রাখছেন। এমনকি কিছু গ্রামে রাতের বেলা অচেনা ব্যক্তিদের চলাচল সীমিত করতে বাঁশের বেড়া পর্যন্ত বসানো হয়েছে।

প্রতিদিনের অপরাধের ধারাবাহিকতায়, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে বেশ কিছু বড় ধরনের চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে—দিনের বেলা টাকা ছিনতাই, সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা, মহাসড়কে গাছ কেটে ফেলে গণডাকাতি, গরু চুরি, ট্রান্সফরমার চুরি, মোটরসাইকেল চুরি এবং ভেরেন্ডি গ্রামে পুলিশের ছদ্মবেশ ধারণ করে ডাকাতরা ৩ ভরি স্বর্ণ ও ৮০ হাজার টাকা লুট করে। সিসিটিভি ফুটেজে অপরাধীদের চেহারা স্পষ্ট ধরা পড়লেও পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, যা গ্রামবাসীদের ক্ষুব্ধ করেছে।

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, তারা একাধিকবার থানায় অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাননি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। চরবাখরা ও হিমাইল-বেশখন্ড গ্রামের বাসিন্দা জালালুদ্দিন ও ইদ্রিস আলি বলেন, “আমরা নিজেদের জানমাল রক্ষার্থে রাতভর পাহারা দিচ্ছি, কিন্তু এটা পুলিশি দায়িত্ব ছিল!” থুপসারা গ্রামের টিম লিডার তাজুল ইসলাম জানান, “দিনভর কাজ করে রাতে ঘুমানোর অধিকার আমাদের ছিল, কিন্তু আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় এখন আমাদের নিজেদেরই পাহারা দিতে হচ্ছে।”

নওয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাজ্জাদুর রহমান বলেন, “গত কয়েক মাসে একের পর এক ডাকাতি, ছিনতাই এবং চুরির ঘটনা ঘটছে। থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ শুধু আশ্বাস দেয়। আমরা আর আশ্বাস চাই না, অপরাধীদের গ্রেফতার এবং বিচার চাই।”

উৎরাইল গ্রামের ছানোয়ার হোসেন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে আর কতদিন চলবে? প্রশাসনের এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, না হলে জনগণ একসময় আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে।”

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন জানান, “এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পেলে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যানদের সহযোগিতায় গ্রামে গ্রামে পাহাড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিছু অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো।”

গ্রামবাসীরা এখন অপেক্ষা করছেন, প্রশাসন যেন তাদের উদ্বেগের প্রতি সুনজরী দিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ১১:৫৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫
৫০৫ বার পড়া হয়েছে

কালাইয়ে রাতভর চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে পাহারায় গ্রামবাসী

আপডেট সময় ১১:৫৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৪ মার্চ ২০২৫

জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। একের পর এক সংঘটিত অপরাধের পর প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে গ্রামবাসীরা নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেদের হাতে তুলে নিয়েছেন। গত ৭ মাস ধরে উপজেলার ১৪৮টি গ্রামে রাতভর লাঠিসোঁটা ও টর্চলাইট হাতে পাহারা দিচ্ছেন গ্রামের সাধারণ মানুষ।

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে এবং এর পর থেকেই কালাই উপজেলায় একের পর এক ডাকাতি, ছিনতাই ও চুরির ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, এবং প্রশাসনের কাছে সুরক্ষা প্রার্থনা করা হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

এ অবস্থায়, ১৪৮টি গ্রামের অধিকাংশ জায়গায় স্থানীয়দের উদ্যোগে পাহারাদার কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছাত্র, যুবক, ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ একযোগে এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করেছেন। প্রতিটি পরিবারের অন্তত এক পুরুষ সদস্যকে পাহারায় নিয়োজিত করা হয়েছে। গ্রামবাসীরা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়ে, সন্দেহজনক লোকদের নজরদারি করছেন এবং প্রয়োজন হলে তাদের নাম-ঠিকানা লিখে রাখছেন। এমনকি কিছু গ্রামে রাতের বেলা অচেনা ব্যক্তিদের চলাচল সীমিত করতে বাঁশের বেড়া পর্যন্ত বসানো হয়েছে।

প্রতিদিনের অপরাধের ধারাবাহিকতায়, অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে বেশ কিছু বড় ধরনের চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে—দিনের বেলা টাকা ছিনতাই, সংঘবদ্ধ ডাকাতির ঘটনা, মহাসড়কে গাছ কেটে ফেলে গণডাকাতি, গরু চুরি, ট্রান্সফরমার চুরি, মোটরসাইকেল চুরি এবং ভেরেন্ডি গ্রামে পুলিশের ছদ্মবেশ ধারণ করে ডাকাতরা ৩ ভরি স্বর্ণ ও ৮০ হাজার টাকা লুট করে। সিসিটিভি ফুটেজে অপরাধীদের চেহারা স্পষ্ট ধরা পড়লেও পুলিশ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি, যা গ্রামবাসীদের ক্ষুব্ধ করেছে।

গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, তারা একাধিকবার থানায় অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাননি। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনগণের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। চরবাখরা ও হিমাইল-বেশখন্ড গ্রামের বাসিন্দা জালালুদ্দিন ও ইদ্রিস আলি বলেন, “আমরা নিজেদের জানমাল রক্ষার্থে রাতভর পাহারা দিচ্ছি, কিন্তু এটা পুলিশি দায়িত্ব ছিল!” থুপসারা গ্রামের টিম লিডার তাজুল ইসলাম জানান, “দিনভর কাজ করে রাতে ঘুমানোর অধিকার আমাদের ছিল, কিন্তু আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় এখন আমাদের নিজেদেরই পাহারা দিতে হচ্ছে।”

নওয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাজ্জাদুর রহমান বলেন, “গত কয়েক মাসে একের পর এক ডাকাতি, ছিনতাই এবং চুরির ঘটনা ঘটছে। থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ শুধু আশ্বাস দেয়। আমরা আর আশ্বাস চাই না, অপরাধীদের গ্রেফতার এবং বিচার চাই।”

উৎরাইল গ্রামের ছানোয়ার হোসেন উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে আর কতদিন চলবে? প্রশাসনের এখনই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, না হলে জনগণ একসময় আইন নিজের হাতে তুলে নিতে বাধ্য হবে।”

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন জানান, “এলাকায় চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পেলে পুলিশি টহল জোরদার করা হয়। ইউপি চেয়ারম্যানদের সহযোগিতায় গ্রামে গ্রামে পাহাড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিছু অপরাধী শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হয়েছে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবো।”

গ্রামবাসীরা এখন অপেক্ষা করছেন, প্রশাসন যেন তাদের উদ্বেগের প্রতি সুনজরী দিয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/checkpostcom/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464