কদম আলীর বিরুদ্ধে নারী পাচার ও প্রতারণার অভিযোগ, ভুক্তভোগীদের কান্নাজড়িত আর্তি
হবিগঞ্জ জেলার উত্তর-পূর্ব ভাদৈ গ্রামের কদম আলীর বিরুদ্ধে নারী পাচার ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছেন একাধিক ভুক্তভোগী। তারা জানিয়েছেন, বিদেশে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কদম আলী সাধারণ ও আর্থিকভাবে দুর্বল যুবতী নারীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে প্রতারণা করে আসছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কদম আলী মৃত মহুরম আলীর পালক পুত্র। প্রায় চার দশক আগে বাহুবল উপজেলার আদ্যপাশা এলাকা থেকে দত্তক নিয়ে ভাদৈ গ্রামে লালন-পালন করা হয় তাকে। পরবর্তীতে মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী হন তিনি। বিদেশ থেকে ফেরার পর শুরু করেন কথিত আদম ব্যবসা।
ভুক্তভোগীদের দাবি, কদম আলী উচ্চ বেতনের চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে গরিব নারীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আদায় করেন। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই প্রবাসে চাকরির ব্যবস্থা না করে টাকা আত্মসাৎ করেন। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, এই প্রক্রিয়ার আড়ালে নারীদের পাচারও করা হচ্ছে।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, কদম আলীর ফাঁদে পড়ে অনেকে এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তাকে টাকা দিয়েছেন। এখন তারা অর্থ ফেরত না পেয়ে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন।
ভুক্তভোগী পইল পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা জলফু মিয়া বলেন, “জায়গা জমি বন্ধক দিয়ে কদম আলীকে টাকা দিয়েছি। চার বছর ধরে রাস্তায় রাস্তায় অনাহারে ঘুরি। আজ আমি নিরুপায়। কদম আলী আমার জীবনটা শেষ করে দিয়েছে। এখন সেই টাকা না পেলে আত্মহত্যা ছাড়া কোনো পথ দেখছি না।”
একইভাবে, দক্ষিন তেঘরিয়া গ্রামের সফিক মিয়া অভিযোগ করেন, “আমি সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছিলাম আমার মেয়ের জামাইকে সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য। সে বিদেশে গেছে ঠিকই, কিন্তু এক বছর হয়ে গেল—আজ পর্যন্ত কোনো কাজ পাচ্ছে না। দিনে দিনে উপবাসে থাকে, বাড়ি থেকে টাকা পাঠাতে হয়।”
এই বিষয়ে আরেক ভুক্তভোগী জানান, “উচ্চ বেতনের চাকরির আশায় আমরা তার কথা বিশ্বাস করি। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি—আমরা প্রতারিত হয়েছি। কেউ মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন মান-সম্মানের ভয়ে।”
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কদম আলী একাধিক নারীর কাছ থেকেও একইভাবে টাকা নিয়েছেন। কেউ কেউ জানিয়েছেন, এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে টাকা দিয়েছেন এবং এখন চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। তারা বলেন, “মান-সম্মানের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। কিন্তু আমাদের আর কিছু হারানোর নেই।”
ভুক্তভোগীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কদম আলীর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে কদম আলীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।