একজন হার না মানা ‘ফ্রিল্যান্সার’ সৈয়দ তাজিনের সফলতার গল্প
‘সবুরে মেওয়া ফলে’- প্রবাদটি অন্য কারো কাছে সত্য হোক বা না হোক কিন্তু তা ফ্রিল্যান্সার সৈয়দ তাজিনের ক্ষেত্রে সত্য বলে প্রতীয়মান হয়েছে। কেননা বারবার ধাক্কা খেয়ে পুনরায় লেগে থাকা, শুধুমাত্র ফ্রিল্যান্সিং-কে পেশা এবং নেশা হিসেবে গ্রহণ করে সফল হওয়া এক স্বপ্নবাজ সৈয়দ তাজিন। আজ দেশে যিনি একজন পেশাদার ফ্রিল্যান্সার হিসেবে পরিচিতি। তবে এই সফলতার সহজ ছিল না। বরং ছিল বাধা ও চ্যালেঞ্জে ভরপুর।
চাকরি না করেও যে স্বাধীনভাবে কিছুকরা যায়, তার আধুনিক পরিচিতি ফ্রিল্যান্সিং। একটু দরদ শির্দা পরিশ্রম ও ধৈর্য বদলে দিতে পারে অনলাইন এবং অফলাইন জীবন। যে কেউ সময়ের সাথে লক্ষ্য ঠিক রেখে চেষ্টা করলে হতে পারে সফল ফ্রিল্যান্সার। হাজারো তরুণে চোখে হয়ে উঠবে আইডল। লক্ষ্য অটুট থাকলে দেশের গন্ডি পরিয়ে বিদেশেও মিলবে সফল ফ্রিল্যান্সারের মর্যাদা।
এমনই একজন তরুণ সৈয়দ তাজিন যার ছিলনা কোনো পরিবার পরিজনের সাপোর্ট, না ছিল কোনো ইনভেস্টমেন্ট। তার জার্নি শুরু হয় ২০১৫ সাল ইনসাম টেকনোলজি থেকে আর ২০১৭ সালে সে প্রথম অর্ডার পায় ইতিহাসের সেরা মার্কেট প্লেস ফাইভার থেকে। তার প্রথম ইনকাম ছিল ৫ ডলার, যা আজ ৫০০ ডলার + এ রুপান্তর হয়েছে। সে ২০১৮ সালে বিশ্বের অন্যতম প্রতিষ্ঠান Microsoft ও Cissco থেকে সাইবার সিকিউরিটি এর সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হন এবং গুগোল থেকে ডিজিটাল মার্কেটার হিসেবে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হন। যখন তার সফলতা আকাশ ছোঁয়ার পথে ঠিক তখনি তার জীবনে ঘটে যায় একটি বড় ধরণের দুর্ঘটনা। মটোরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে অনেকটাই পিছিয়ে যায়, তবু সে হার মানে না। শুরু করে ফেইসবুক মার্কেটিং ও ফেইসবুক রিকভারি দিয়ে এক পর্যায় সে সফলতা ফিরে পেতে থাকে, এখন সে একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা। সে দেশের বাহিরের অনেক বড় বড় দেশের লোকের সাথে সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। দেশ গুলার তালিকায় আছে আমিরিকা, লন্ডন, কানাডা, ফ্রান্স, আয়ারল্যান্ডে, দুবাই ইত্যাদি।
এ উদীয়মান এই ফ্রিলান্সার এখন নিজে ফ্রিল্যান্সিং করার পাশাপাশি আগ্রহী তরুণদের প্রশিক্ষণও দেন, কৌশল শেখান। দেশ জুড়ে বর্তমানে তাঁর প্রায় ১০ জন শিক্ষার্থী কাজ করছে। ফ্রিল্যান্সিং- এর মৌলিক বিষয়ে জানার পাশাপাশি বিশ্বস্ততার সাথে তার সাথে কাজ করা ও উপার্জন করতে পারছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
ফ্রিলান্সিং জীবনে তিক্ততম সময়ের কথা জানিয়ে সৈয়দ তাজিন বলেন, এই পথে সফল হতে হলে যা করতে আগ্রহী সেটা নিয়েই কাজ করতে হবে। কেননা ছুটোছুটি করে ফ্রিল্যান্সিংয়ে সফল হওয়া যায় না। সফল হতে নিয়মিত ও সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করতে হবে। এ জন্য ধৈর্য হলো সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। এটাকে জয় করতে পারলে সফলতা নিশ্চিত।
দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে নিজের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এই উদীয়মান ফ্রিল্যান্সার।
উপার্জনের পদ্ধতি সম্পর্কে সৈয়দ তাজিন বলেন, “ফ্রিল্যান্সিংয়ে ঢুকেই হাজার হাজার ডলার আয় হয়। এমন স্বপ্ন দেখা বন্ধ করতে হবে। কারণ ব্যবসায় ঢুকে কখনই কেউ একবারে বিরাট কিছু করতে পারে না। এটাও ঠিক একই রকম। তাই সময় নিয়ে কাজ করতে হবে। তাহলে আস্তে আস্তে আয় বাড়বে। কেননা একটা কথা মাথায় রাখতে হবে- ফ্রিলান্সিং করে কেউ রাতারাতি বড়লোক হয় না।”
উপার্জনের পাশাপাশি ইবাদাতের বিষয়কেও গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানিয়ে সৈয়দ তাজিন বলেন, ”এ পথে অনেক উপার্জন করা সম্ভব। তবে এই উপার্জন করতে গিয়ে নিজের রবকে ভুলে গেলে হবে না। কারণ আল্লাহ দুই ধরণের রিজিক দেয়। প্রথমত, তিনি এমন রিজিক দেন যে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে গিয়ে মৃত্যু চলে আসে। ফলে তাঁর কাছে ফিরে যাওয়ার আর কোন সুযোগ থাকে না৷ অন্য দিকে হালাল রিজিক আল্লাহ নিজ হাতে দেন যা বান্দাহকে সন্তুষ্ট রাখে। তাই হালাল উপার্জন অতি জরুরি।”
সৈয়দ তাজিনের ছোট একটি ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি রয়েছে। বর্তমানে তার মূল উদ্দেশ্য অনলাইনের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করে কর্মসংস্থান তৈরী করা। তিনি সকলের কাছে দোয়া ও সাপোর্ট চেয়েছেন।