একজন আদর্শবাদী মানুষ তার কর্মের মধ্য দিয়ে মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকেন
একজন মানুষকে হত্যা করা যায়, কিন্তু তার আদর্শকে কখনো হত্যা করা যায় না। একজন আদর্শবাদী মানুষ তার কর্মের মধ্য দিয়ে মৃত্যুর পরেও বেঁচে থাকেন। মৃত্যুর ২০ বছর পরেও স্মরণ সভায় সর্বস্তরের নাগরিক প্রতিনিধিদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি প্রমাণ করে শহীদ সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিন একজন আদর্শবাদী মানুষ ছিলেন।
খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এমইউজে) খুলনার সাবেক সভাপতি ও দৈনিক সংগ্রামের খুলনা ব্যুরো প্রধান শেখ বেলাল উদ্দিনের ২০তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আজ ৮ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় খুলনা প্রেসক্লাব চত্বরে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে খুলনা প্রেসক্লাবের প্রবেশ চত্বরে দূরনিয়ন্ত্রিত রিমোট কন্ট্রোল বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) মৃত্যুবরণ করেন বেলাল উদ্দিন। নির্মম ও বর্বরোচিত হামলার সেই ঘটনাস্থলেই এবার স্মরণ সভার আয়োজন করেছে এমইউজে খুলনা। কালো ব্যানার, কালো ঝালর-আবৃত চেয়ার-টেবিল যেন সেদিনের শোককে বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল।
মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (এমইউজে) খুলনার উদ্যোগে স্মরণ সভায় সভাপতিত্ব করেন ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ আনিসুজ্জামান। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মহাম্মদ মাসুদ এবং প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সহকারী মহাসচিব এহতেশামুল হক শাওন।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোঃ মোহসীন আলী ফরাজী, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নুরুল হাসান রুবা, খুলনা প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুল, বিএফইউজের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ রাশিদুল ইসলাম, সাবেক নির্বাহী সদস্য শেখ দিদারুল আলম ও এইচ এম আলাউদ্দিন, ইঞ্জিনিয়ার মোল্লা আলমগীর, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের খুলনা জেলা সভাপতি মনিরুল হক বাবুল, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন খুলনা জেলার সভাপতি এম এ হাসান প্রমুখ।
সভায় বক্তারা বলেন, শেখ বেলাল উদ্দিন কেবল একজন পেশাদার সাংবাদিক ছিলেন না; সাংবাদিকতার ব্যাপ্তি ছাড়িয়ে তিনি রাজনীতি, সমাজ সংস্কার, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিসহ সকল ক্ষেত্রে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন। সবার উপকারের জন্য তিনি আমৃত্যু নিজেকে উজাড় করে গেছেন। তার মৃত্যুতে সকল ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি ও পেশার মানুষ শোকাহত হয়েছিল।
বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, শেখ বেলাল উদ্দিনসহ কোনো সাংবাদিক হত্যার প্রকৃত তদন্ত ও ন্যায়বিচার হয়নি। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে হত্যাকারীরা মুক্ত হয়ে বীরদর্পে সমাজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধ বেড়েছে। বক্তারা সকল সাংবাদিক হত্যার পুনঃতদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
স্মরণ সভা থেকে ঘোষণা করা হয়, আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টায় নগরীর রায়েরমহলস্থ শহীদ সাংবাদিক শেখ বেলাল উদ্দিনের কবর জিয়ারত করা হবে। খুলনা প্রেসক্লাবও বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ১১ ফেব্রুয়ারি শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল। সকাল ১০:৪৫ মিনিটে শহীদ সাংবাদিক স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ এবং বেলা ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবের হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।