ঢাকা ০৫:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না: আলী রীয়াজ

চেকপোস্ট ডেস্ক::

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না—এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কেউ যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তবে তাকে দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে দিতে হবে।

তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দল এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। এ বিষয়ে জাতীয় সনদে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) দেওয়ার সুযোগ থাকবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের ১৭তম দিনে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সংলাপ শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের পদে একই ব্যক্তি থাকতে পারবেন না—এই প্রস্তাবের সঙ্গে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ রাজনৈতিক দল একমত। তবে কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছে। তারা জাতীয় সনদে নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারবেন।”

তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে কেউ চাইলে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাতে পারেন। তবে আপাতত এই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।”

কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না। এতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সমর্থন জানালেও বিএনপি, এলডিপি, লেবার পার্টি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও আম জনতার দল প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দল এর পক্ষে মত দেয়।

সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন কাঠামো নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের নেতৃত্বে একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়, যেটির পক্ষে অধিকাংশ দল মত দিলেও বিএনপি বিকল্প প্রস্তাব দেয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, “সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর বিধান অনুসরণ করেই প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করতে হবে। তবে রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে বিচার বিভাগ থেকে কাউকে প্রধান উপদেষ্টা করা যেতে পারে।” এ প্রস্তাবের সঙ্গে জামায়াতও একমত হয়।

অন্যদিকে এনসিপিসহ অন্যান্য দলগুলো সংসদীয় এবং নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়। ফলে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল একমত। তবে এর কাঠামো নিয়ে এখনও কিছু মতভেদ রয়েছে। আগামী বৈঠকে (২৫ জুলাই) এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আশা করছি।”

তিনি জানান, কমিশনের অধিকাংশ প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত হলেও “র‌্যাঙ্কড চয়েস পদ্ধতি” নিয়ে মতভেদ রয়ে গেছে।

সংলাপের শুরুতে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করা হয়। কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। নিহত ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানানো হয় এবং সরকারের কাছে দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা গভীর শোকাবহ সময়ে এই সংলাপে বসেছি। এ ধরনের দুর্ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সে লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।”

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ এবং সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এম. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া। সংলাপে মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নেন।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৮:৩৮:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
৫৩৯ বার পড়া হয়েছে

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না: আলী রীয়াজ

আপডেট সময় ০৮:৩৮:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না—এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কেউ যদি প্রধানমন্ত্রী হন, তবে তাকে দলীয় প্রধানের পদ ছেড়ে দিতে হবে।

তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দল এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছে। এ বিষয়ে জাতীয় সনদে ভিন্নমত (নোট অব ডিসেন্ট) দেওয়ার সুযোগ থাকবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপের ১৭তম দিনে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। সংলাপ শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধানের পদে একই ব্যক্তি থাকতে পারবেন না—এই প্রস্তাবের সঙ্গে প্রায় তিন-চতুর্থাংশ রাজনৈতিক দল একমত। তবে কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছে। তারা জাতীয় সনদে নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারবেন।”

তিনি আরও বলেন, “ভবিষ্যতে কেউ চাইলে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানাতে পারেন। তবে আপাতত এই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।”

কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়, একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও দলীয় প্রধান হতে পারবেন না। এতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সমর্থন জানালেও বিএনপি, এলডিপি, লেবার পার্টি, এনডিএম, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও আম জনতার দল প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দল এর পক্ষে মত দেয়।

সংলাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন কাঠামো নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। কমিশনের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের নেতৃত্বে একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়, যেটির পক্ষে অধিকাংশ দল মত দিলেও বিএনপি বিকল্প প্রস্তাব দেয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ জানান, “সংবিধানের ১৩তম সংশোধনীর বিধান অনুসরণ করেই প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ করতে হবে। তবে রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে বিচার বিভাগ থেকে কাউকে প্রধান উপদেষ্টা করা যেতে পারে।” এ প্রস্তাবের সঙ্গে জামায়াতও একমত হয়।

অন্যদিকে এনসিপিসহ অন্যান্য দলগুলো সংসদীয় এবং নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে বাছাই কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেয়। ফলে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল একমত। তবে এর কাঠামো নিয়ে এখনও কিছু মতভেদ রয়েছে। আগামী বৈঠকে (২৫ জুলাই) এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের আশা করছি।”

তিনি জানান, কমিশনের অধিকাংশ প্রস্তাবের সঙ্গে বিএনপি নীতিগতভাবে একমত হলেও “র‌্যাঙ্কড চয়েস পদ্ধতি” নিয়ে মতভেদ রয়ে গেছে।

সংলাপের শুরুতে উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব পাঠ করা হয়। কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। নিহত ও আহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও সমবেদনা জানানো হয় এবং সরকারের কাছে দুর্ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, “আমরা গভীর শোকাবহ সময়ে এই সংলাপে বসেছি। এ ধরনের দুর্ঘটনা যেন ভবিষ্যতে আর না ঘটে, সে লক্ষ্যে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।”

সংলাপে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ এবং সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এম. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন ও ড. মো. আইয়ুব মিয়া। সংলাপে মোট ৩০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি অংশ নেন।