নতুন মহামারির শঙ্কা
এইচএমপিভি ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের
বিশ্ব যখন করোনাকালের দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে উঠেছে, তখন নতুন একটি মহামারির বার্তা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সাউথ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র গবেষক ড. মাইকেল হেড বলেছেন, “একটি মহামারির আশঙ্কা করা হচ্ছে, তবে কোন রোগটি মহামারি আকার ধারণ করবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। এই আগাম মহামারিকে দেওয়া হয়েছে ‘ডিজিস-এক্স’ নাম।”
হাম, কলেরা, বার্ড-ফ্লু এবং স্ক্যাবিসের মতো প্রায় ১১টি রোগকে সম্ভাব্য মহামারির তালিকায় রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় শঙ্কা তৈরি করেছে এইচএমপিভি (মানব মেটাপনিউমোভাইরাস)। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, করোনার সময়ের মতোই হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেড়েছে। জাপানেও একই অবস্থা; সেখানকার সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ঠাণ্ডাজনিত সংক্রমণ ৭ লাখেরও বেশি মানুষকে আক্রান্ত করেছে।
ড. হেড আরও বলেন, “আগামীর মহামারির বৈশিষ্ট্য হবে মারাত্মক ছোঁয়াচে এবং মৃত্যুহার হবে অত্যন্ত বেশি।” এইচএমপিভি ভাইরাসের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে শিশু এবং বৃদ্ধদের মধ্যে। বিশেষ করে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগতে থাকা ব্যক্তিরা এই ভাইরাসের আক্রমণে বেশি নাজুক অবস্থায় পড়ছেন। সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত উপসর্গ থেকে শুরু হয়ে এই ভাইরাস ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, অ্যাজমা বা কানে ইনফেকশনের মতো গুরুতর সমস্যায় রূপ নিতে পারে।
চীন থেকে এই ভাইরাস যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য ভারত আগে থেকেই সতর্ক। ভারতের স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালক ড. অতুল গয়াল জানিয়েছেন, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যাগুলো এখন থেকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। তিনি বলেন, “আপাতত এটিকে সাধারণ ফ্লু ভাইরাস বলেই মনে হচ্ছে। শঙ্কার কোনো কারণ নেই। তবে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলায় হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
প্রায় দুই দশক আগে প্রথমবারের মতো এইচএমপিভি ভাইরাস শনাক্ত হলেও এখনো কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা মোকাবেলায় যে সতর্কতা নেওয়া হয়েছিল, সেই একই পদক্ষেপ এই ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর হতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়:
- ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়া।
- অপরিষ্কার হাতে নাক-মুখ স্পর্শ না করা।
- আক্রান্তদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো এই ভাইরাস নিয়ে কোনো সতর্কতা জারি করেনি। তবে চীনের পরিস্থিতি দেখে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, শিগগিরই জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে। করোনার অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে, জনসাধারণকে দ্রুত সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
করোনা মহামারিতে বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৪০ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এ অবস্থায় নতুন ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।