ঢাকা ০৩:৪৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈদেও বেতন নেই খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালের ৮৮ জন কর্মচারীর

মোঃ রবিউল হোসেন খান, খুলনা::

ছবি: চেকপোস্ট

ঈদ-উল-ফিতর সামনে, অথচ খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালের ৮৮ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী বেতন না পাওয়ায় চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। জানুয়ারি মাসের পর থেকে তাদের কোনো বেতন প্রদান করা হয়নি, ফলে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।

আউটসোর্সিং কর্মচারী মোঃ সোহেল জানান, “ঈদেও বেতন নেই। জানুয়ারি থেকে কোনো টাকা পাইনি। আগে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিজ খরচে কিছু টাকা দিত, কিন্তু এখন আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো কার্যক্রমই চালানো যাচ্ছে না। হাসপাতাল পরিচালক অনেক চেষ্টা করলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা কষ্টে আছি। একমাত্র আল্লাহই ভরসা।”

গত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টি ফোর এস-এর পরিচালক মোঃ গিয়াস হাসপাতালের আউটসোর্সিং কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী যুক্ত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা কর্মচারীদের নামে ব্যাংক হিসাব খুলে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে প্রতিমাসে ১০-১২ লাখ টাকা উত্তোলন করতেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কর্মচারীরা আশার আলো দেখলেও তাদের দুর্ভোগ কমেনি। ১৮ নভেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নতুন দরপত্র আহ্বান করে, যাতে ৮৮টি পদের জন্য জনবল সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু ৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত থেকে তিন মাসের জন্য এই কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ আসে, যা আবি ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক মোঃ আলামিন রিট করে আদায় করেন। এরপর থেকেই কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টি ফোর এস-এর পরিচালক মোঃ গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার তাপস জানান, “এই কর্মচারীরা এখন আমাদের নয়, আমাদের চুক্তির মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। এখন আদালতই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতে কী হবে।”

খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক ডা. শেখ আবু শাহিন বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো জবাব পাইনি। কর্মচারীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ঈদেও তারা বেতন পাচ্ছে না, এটি দুঃখজনক। আমি চেষ্টা করছি যেন দ্রুত রিট ভ্যাকেট হয় এবং সবকিছু স্বাভাবিক হয়।”

নতুন দরপত্র নিয়ে আদালতের স্থগিতাদেশের মেয়াদ তিন মাস পার হলেও এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। এবি ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক মোঃ আলামিন বলেন, “আমি রিট করেছিলাম, তবে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানি না। ঈদের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে, কর্মচারীরা রোজগারের অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। ঈদের সময়েও তারা বেতন পাচ্ছেন না, যা তাদের জন্য দুঃখজনক এবং অমানবিক। তারা দ্রুত এই সংকট সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

 

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৫:১৩:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫
৫৩৫ বার পড়া হয়েছে

ঈদেও বেতন নেই খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালের ৮৮ জন কর্মচারীর

আপডেট সময় ০৫:১৩:০৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ মার্চ ২০২৫

ঈদ-উল-ফিতর সামনে, অথচ খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালের ৮৮ জন আউটসোর্সিং কর্মচারী বেতন না পাওয়ায় চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন। জানুয়ারি মাসের পর থেকে তাদের কোনো বেতন প্রদান করা হয়নি, ফলে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।

আউটসোর্সিং কর্মচারী মোঃ সোহেল জানান, “ঈদেও বেতন নেই। জানুয়ারি থেকে কোনো টাকা পাইনি। আগে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিজ খরচে কিছু টাকা দিত, কিন্তু এখন আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে কোনো কার্যক্রমই চালানো যাচ্ছে না। হাসপাতাল পরিচালক অনেক চেষ্টা করলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা কষ্টে আছি। একমাত্র আল্লাহই ভরসা।”

গত ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টি ফোর এস-এর পরিচালক মোঃ গিয়াস হাসপাতালের আউটসোর্সিং কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন। তার সঙ্গে আরও কয়েকজন রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী যুক্ত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, তারা কর্মচারীদের নামে ব্যাংক হিসাব খুলে জোরপূর্বক স্বাক্ষর নিয়ে প্রতিমাসে ১০-১২ লাখ টাকা উত্তোলন করতেন।

২০২৩ সালের ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর কর্মচারীরা আশার আলো দেখলেও তাদের দুর্ভোগ কমেনি। ১৮ নভেম্বর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নতুন দরপত্র আহ্বান করে, যাতে ৮৮টি পদের জন্য জনবল সরবরাহের কথা ছিল। কিন্তু ৪ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত থেকে তিন মাসের জন্য এই কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ আসে, যা আবি ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক মোঃ আলামিন রিট করে আদায় করেন। এরপর থেকেই কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হয়ে যায়।

এ বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান টি ফোর এস-এর পরিচালক মোঃ গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার তাপস জানান, “এই কর্মচারীরা এখন আমাদের নয়, আমাদের চুক্তির মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে। এখন আদালতই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতে কী হবে।”

খুলনা বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক ডা. শেখ আবু শাহিন বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো জবাব পাইনি। কর্মচারীরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু ঈদেও তারা বেতন পাচ্ছে না, এটি দুঃখজনক। আমি চেষ্টা করছি যেন দ্রুত রিট ভ্যাকেট হয় এবং সবকিছু স্বাভাবিক হয়।”

নতুন দরপত্র নিয়ে আদালতের স্থগিতাদেশের মেয়াদ তিন মাস পার হলেও এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি। এবি ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের পরিচালক মোঃ আলামিন বলেন, “আমি রিট করেছিলাম, তবে বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানি না। ঈদের পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে, কর্মচারীরা রোজগারের অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। ঈদের সময়েও তারা বেতন পাচ্ছেন না, যা তাদের জন্য দুঃখজনক এবং অমানবিক। তারা দ্রুত এই সংকট সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।