ঢাকা ০৪:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আল্লাহ তায়ালা যে আমলের মাধ্যমে সাহাবিদের জান্নাতের সন্ধান দিয়েছেন

ইসলাম ডেস্ক::

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বর্ণনা করেন, একদল সাহাবায়ে কিরাম পরস্পরে আলোচনা করলেন যে, আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি, আমরা যদি তা জানতে পারতাম, তবে তা বাস্তবায়িত করতাম।

তারা কেউ কেউ একথাও বললেন যে, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমলটি জানতে পারলে আমরা এজন্য জান ও মাল সব বিসর্জন করতাম।

ইবনে কাসীর মুসনাদে আহমদের বরাতে বর্ণনা করেন যে, সাহাবিরা একত্রিত হয়ে পরস্পরে এই আলোচনা করার পর একজনকে রাসূলুল্লাহ সা-এর কাছে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করার জন্য পাঠাতে চাইলেন কিন্তু কারও সাহস হল না।

ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ সা. তাঁদেরকে নামে নামে নিজের কাছে ডেকে পাঠালেন। (ফলে বোঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সা. ওহীর মাধ্যমে তাঁদের সমাবেশ ও আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত হয়েছেন )। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হলে তিনি তাঁদেরকে পুরো সূরা সাফফ পাঠ করে শুনিয়ে দিলেন, যা তখনই নাজিল হয়েছিল।

এই সূরা থেকে জানা যায় যে, তাঁরা সর্বাধিক প্রিয় যে আমলটির সন্ধানে ছিলেন, সেটি হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ।

এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ہَلۡ اَدُلُّکُمۡ عَلٰی تِجَارَۃٍ تُنۡجِیۡکُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ ١۰ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَرَسُوۡلِہٖ وَتُجَاہِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِاَمۡوَالِکُمۡ وَاَنۡفُسِکُمۡ ؕ  ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ۙ ١١ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ وَیُدۡخِلۡکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ وَمَسٰکِنَ طَیِّبَۃً فِیۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍ ؕ  ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ۙ ١٢

হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব যা তোমাদেরকে মর্মান্তিক ‘আজাব থেকে রক্ষা করবে? (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনো আর তোমরা তোমাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ কর; এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে!

(তোমরা যদি আল্লাহর সন্ধান দেয়া ব্যবসা কর তাহলে) তিনি তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন আর তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যার তলদেশে ঝরনাধারা প্রবাহিত। আর চিরস্থায়ী আবাসস্থল জান্নাতে অতি উত্তম ঘর তোমাদেরকে দান করবেন। এটাই বিরাট সাফল্য। (সূরা সাফফ, আয়াত : ১০-১২)

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুমিনের ঈমান এবং ধনসম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করাকে বাণিজ্য আখ্যা দিয়েছেন। কারণ, বাণিজ্যে যেমন কিছু ধনসম্পদ ও শ্রম ব্যয় করার বিনিময়ে মুনাফা অর্জিত হয়, তেমনি ঈমান সহকারে আল্লাহর পথে জান ও মাল ব্যয় করার বিনিময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের চিরস্থায়ী নিয়ামত অর্জিত হয়।

এ বিষয়ে আরও বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি এই বাণিজ্য অবলম্বন করবে, আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ মাফ করবেন এবং জান্নাতে উৎকৃষ্ট বাসগৃহ দান করবেন। এসব বাসগৃহে সর্বপ্রকার আরাম ও বিলাস ব্যসনের সরঞ্জাম থাকবে।

আর ব্যবসায়ে যেমন দ্বিপাক্ষিক লেনদেন থাকে। অর্থাৎ এক পক্ষ অপর পক্ষকে কোনো মাল দিয়ে বিনিময়ে তার মূল্য গ্রহণ করে। সে রকমই মুমিনগণ নিজের জান-মাল আল্লাহ তায়ালাকে সমর্পণ করেন এবং আল্লাহ তায়ালা বিনিময়ে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতবাসী করেন। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি নিজের দেওয়া জান-মালকেই ক্রেতা হিসেবে জান্নাতের বিনিময়ে গ্রহণ করেন।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৪:৩৯:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪
৫২২ বার পড়া হয়েছে

আল্লাহ তায়ালা যে আমলের মাধ্যমে সাহাবিদের জান্নাতের সন্ধান দিয়েছেন

আপডেট সময় ০৪:৩৯:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ জুলাই ২০২৪

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বর্ণনা করেন, একদল সাহাবায়ে কিরাম পরস্পরে আলোচনা করলেন যে, আল্লাহ তায়ালার কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল কোনটি, আমরা যদি তা জানতে পারতাম, তবে তা বাস্তবায়িত করতাম।

তারা কেউ কেউ একথাও বললেন যে, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমলটি জানতে পারলে আমরা এজন্য জান ও মাল সব বিসর্জন করতাম।

ইবনে কাসীর মুসনাদে আহমদের বরাতে বর্ণনা করেন যে, সাহাবিরা একত্রিত হয়ে পরস্পরে এই আলোচনা করার পর একজনকে রাসূলুল্লাহ সা-এর কাছে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করার জন্য পাঠাতে চাইলেন কিন্তু কারও সাহস হল না।

ইতিমধ্যে রাসূলুল্লাহ সা. তাঁদেরকে নামে নামে নিজের কাছে ডেকে পাঠালেন। (ফলে বোঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সা. ওহীর মাধ্যমে তাঁদের সমাবেশ ও আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে অবগত হয়েছেন )। তাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হলে তিনি তাঁদেরকে পুরো সূরা সাফফ পাঠ করে শুনিয়ে দিলেন, যা তখনই নাজিল হয়েছিল।

এই সূরা থেকে জানা যায় যে, তাঁরা সর্বাধিক প্রিয় যে আমলটির সন্ধানে ছিলেন, সেটি হচ্ছে আল্লাহর পথে জিহাদ।

এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন—

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ہَلۡ اَدُلُّکُمۡ عَلٰی تِجَارَۃٍ تُنۡجِیۡکُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ ١۰ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَرَسُوۡلِہٖ وَتُجَاہِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ بِاَمۡوَالِکُمۡ وَاَنۡفُسِکُمۡ ؕ  ذٰلِکُمۡ خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ۙ ١١ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ ذُنُوۡبَکُمۡ وَیُدۡخِلۡکُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ وَمَسٰکِنَ طَیِّبَۃً فِیۡ جَنّٰتِ عَدۡنٍ ؕ  ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ ۙ ١٢

হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব যা তোমাদেরকে মর্মান্তিক ‘আজাব থেকে রক্ষা করবে? (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনো আর তোমরা তোমাদের মাল ও জান দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ কর; এটাই তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা জানতে!

(তোমরা যদি আল্লাহর সন্ধান দেয়া ব্যবসা কর তাহলে) তিনি তোমাদের পাপ ক্ষমা করে দেবেন আর তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে যার তলদেশে ঝরনাধারা প্রবাহিত। আর চিরস্থায়ী আবাসস্থল জান্নাতে অতি উত্তম ঘর তোমাদেরকে দান করবেন। এটাই বিরাট সাফল্য। (সূরা সাফফ, আয়াত : ১০-১২)

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মুমিনের ঈমান এবং ধনসম্পদ ও জীবনপণ করে জিহাদ করাকে বাণিজ্য আখ্যা দিয়েছেন। কারণ, বাণিজ্যে যেমন কিছু ধনসম্পদ ও শ্রম ব্যয় করার বিনিময়ে মুনাফা অর্জিত হয়, তেমনি ঈমান সহকারে আল্লাহর পথে জান ও মাল ব্যয় করার বিনিময়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের চিরস্থায়ী নিয়ামত অর্জিত হয়।

এ বিষয়ে আরও বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি এই বাণিজ্য অবলম্বন করবে, আল্লাহ তায়ালা তার গুনাহ মাফ করবেন এবং জান্নাতে উৎকৃষ্ট বাসগৃহ দান করবেন। এসব বাসগৃহে সর্বপ্রকার আরাম ও বিলাস ব্যসনের সরঞ্জাম থাকবে।

আর ব্যবসায়ে যেমন দ্বিপাক্ষিক লেনদেন থাকে। অর্থাৎ এক পক্ষ অপর পক্ষকে কোনো মাল দিয়ে বিনিময়ে তার মূল্য গ্রহণ করে। সে রকমই মুমিনগণ নিজের জান-মাল আল্লাহ তায়ালাকে সমর্পণ করেন এবং আল্লাহ তায়ালা বিনিময়ে তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতবাসী করেন। এটা বান্দার প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ যে, তিনি নিজের দেওয়া জান-মালকেই ক্রেতা হিসেবে জান্নাতের বিনিময়ে গ্রহণ করেন।