আন্দোলনে সক্রিয় ও জনপ্রিয় নেতাদের বাছাই করছে বিএনপি
নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত না হলেও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থী বাছাইয়ের প্রস্তুতি শুরু করেছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। এরই মধ্যে জামায়াতে ইসলামি, ইসলামী আন্দোলন, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদ প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা প্রকাশ করেছে। যদিও বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি, তবে দলটির ভেতরে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সাংগঠনিক নেতারা মাঠপর্যায়ে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে আন্দোলনে সক্রিয়, ক্লিন ইমেজধারী এবং জনপ্রিয় নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি।
দলীয় সূত্র মতে, ফেব্রুয়ারি ২০২৬ কে টার্গেট করে দলটি ইতোমধ্যে নির্বাচনি কর্মকৌশল তৈরি করেছে। তিন স্তরে যাচাই-বাছাই শেষে ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের একটি খসড়া তালিকা প্রস্তুত হয়েছে। তালিকায় একাধিক প্রার্থীর নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং এসব প্রার্থীর কর্মদক্ষতা, আন্দোলনের ভূমিকা, জনপ্রিয়তা এবং রাজনৈতিক অবদান মূল্যায়ন করে তথ্য পাঠানো হয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে।
জানা গেছে, গত ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রায় আড়াই হাজার মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন বিএনপিতে। এবারও বেশিরভাগ আসনে তিন থেকে পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন। আন্দোলনের নতুন বাস্তবতায় জনপ্রিয়তা ও মাঠের সক্রিয়তাই হবে চূড়ান্ত মনোনয়নের বড় মাপকাঠি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, “প্রার্থী বাছাই নিয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা এখনো শুরু হয়নি। তবে প্রাথমিকভাবে অনেক কিছু ঠিকঠাক আছে। আন্দোলনের ভূমিকা, সাংগঠনিক দক্ষতা, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সব বিবেচনায় আসবে।”
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হলেই আমরা প্রস্তুত। প্রার্থী চূড়ান্ত করা কোনো কঠিন কাজ নয়।”
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “৩০০ আসনে ৪-৫ জন করে প্রার্থী প্রস্তুত রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণা হলে যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত করা হবে। ১৬-১৭ বছর ধরে রাজপথে লড়াই করে এই প্রস্তুতি স্বাভাবিক।”
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, “পটপরিবর্তনের পর থেকেই সাংগঠনিকভাবে মাঠপর্যায়ে কাজ চলছে। তারেক রহমানের নির্দেশে সব বিভাগে সাংগঠনিক টিম কাজ করছে। ৫ আগস্টের পরবর্তী কর্মসূচির সঙ্গে নির্বাচনি প্রস্তুতির গতি বাড়বে।”
স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “প্রত্যেক প্রার্থীর বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন (এসিআর) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে রয়েছে। তিনি সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে যোগ্যদেরই বাছাই করবেন।”
বিএনপির ঘনিষ্ঠ এক সিনিয়র নেতা জানান, “মুখে মুখে অনেক প্রার্থী চূড়ান্ত হয়ে গেছে। তবে এবার আন্দোলনে ভূমিকা রাখা তরুণ নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে নতুন ধাঁচে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।”
দলটির বিভিন্ন নেতাদের বক্তব্য এবং মাঠপর্যায়ের তৎপরতা বলছে, এবার নির্বাচনে বিএনপির মূল ফোকাস হবে তৃণমূলের সঙ্গে সংযুক্ত, ক্লিন ইমেজধারী এবং আন্দোলনকেন্দ্রিক জনপ্রিয় নেতাদের দলে আনা।