ঢাকা ১১:০৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিসিটিভি ফুটেজে ভিন্ন চিত্র:

অলিপুরে চাঁদাবাজি মামলায় ফেঁসে নির্দোষ জসিম কারাগারে

স্টাফ রিপোর্টার::

ছবি: সিসি ক্যামেরা থেকে নেয়া

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার আলিপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া এক মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় হাজতে রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক জসিম উদ্দিন আহমেদ। অথচ ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, যা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।

জানা গেছে, ২০ সেপ্টেম্বর রাতে রাসেল মার্কেটের মালিকানা নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের জেরে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া মামলায় জসিম উদ্দিনকে ২নং আসামি করা হয়। তিনি ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের উলুহর গ্রামের মৃত মুনিম উদ্দিন আহমেদ খুকু মিয়ার ছেলে।

সূত্রে জানা যায়, আলীপুর মৌজার জে.এল. নং-১০২, এস.এ খতিয়ান-১৬৪ এবং দাগ নং ১৩৩ ও ১৯২ আর.এস দাগে  মোট দুই শতক জমির মালিক সাহিদা আক্তার রুনু। দীর্ঘদিন ধরে তার জমি জোরপূর্বক দখলে রেখেছেন হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ফজলে রাব্বি রাসেল। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হলে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ওই জমির উপর ১৪৪ ধারায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন।

সাহিদা আক্তার পেশাগত কারণে বাইরে থাকায় জমি সংক্রান্ত সব আইনগত কার্যক্রমের জন্য তিনি তার নিকটাত্মীয় জিয়াউর রহমানকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদান করেন। আইনানুগভাবে জিয়াউর রহমান আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে ২০ সেপ্টেম্বর রাতে রাসেল মার্কেটের দোকানদারদের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার বিষয়টি জানান। এসময় ফজলে রাব্বি রাসেলের ভাড়াটিয়ারা তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।

এরপর ২২ সেপ্টেম্বর রাসেলের খালাতো ভাই নাজমুল ইসলাম বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫-২০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, জসিম উদ্দিন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের হুকুম দেন এবং অস্বীকৃতি জানালে দোকান থেকে বের করে দেন। এমনকি ৭০ হাজার টাকা চুরির অভিযোগও মামলায় তোলা হয়।

তবে ঘটনার রাতের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুরো ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। মামলার সময় অনুযায়ী, চাঁদাবাজির ঘটনাটি ঘটে ২০ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ৩০ মিনিটে। অথচ ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৮টা ২৪ মিনিটে জসিম উদ্দিন মোটরসাইকেলে নিজ বাড়িতে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি বাড়ির উঠোনে আত্মীয়ের সঙ্গে আড্ডা দেন এবং রাত ৯টা পর্যন্ত বাড়িতেই অবস্থান করেন।

প্রশ্ন জাগে-একই সময়ে একজন মানুষ দুটি স্থানে কীভাবে থাকতে পারে? যদি তিনি ৮টা ২৪ মিনিটে বাড়িতে থাকেন এবং রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন, তাহলে ৮টা ৩০ মিনিটে বাজারে গিয়ে চাঁদাবাজি করার অভিযোগ কীভাবে সম্ভব?

রাসেল মার্কেট ও আশেপাশের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার দিন রাতে অলিপুরে বিপুল মানুষ ছিল, দোকানপাট খোলা ছিল এবং আশেপাশে পর্যাপ্ত আলো ছিল। কিন্তু কেউ জসিম উদ্দিনকে ঘটনাস্থলে দেখেননি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী হুমায়ুন মিয়া বলেন,“আমরা সবাই দোকানে ছিলাম, কিন্তু জসিম ভাইকে ওই রাতে একবারও দেখিনি। কেউ চাঁদার কথা বলেনি।”

স্থানীয়রা আরও দাবি করেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে পরিকল্পিতভাবে জসিম উদ্দিনকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাদের মতে, এটি সামাজিক প্রভাব হ্রাস ও চলমান জমি মামলায় ভিন্নমুখী চাপ সৃষ্টি করার একটি চক্রান্ত।

জসিম উদ্দিনের ছোট ভাই মিজান উদ্দিন মোহন বলেন, “আমার ভাই একজন সৎ ও সম্মানিত ব্যবসায়ী। তিনি সমাজসেবার সঙ্গে জড়িত। ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে আমার ভাইকে মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি দিন।”

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কান্ত নাথ বলেন, ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত চলমান থাকায় এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে তদন্তে যা সত্য ও সঠিক প্রমাণিত হবে, তার ভিত্তিতেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে মামলার দুইজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০৪:৫০:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫
৬৯২ বার পড়া হয়েছে

সিসিটিভি ফুটেজে ভিন্ন চিত্র:

অলিপুরে চাঁদাবাজি মামলায় ফেঁসে নির্দোষ জসিম কারাগারে

আপডেট সময় ০৪:৫০:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ অক্টোবর ২০২৫

শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার আলিপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে দায়ের হওয়া এক মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় হাজতে রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক জসিম উদ্দিন আহমেদ। অথচ ঘটনার সময় তিনি ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে নিজ বাড়িতে অবস্থান করছিলেন, যা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে স্পষ্টভাবে ধরা পড়েছে।

জানা গেছে, ২০ সেপ্টেম্বর রাতে রাসেল মার্কেটের মালিকানা নিয়ে দুই পক্ষের বিরোধের জেরে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া মামলায় জসিম উদ্দিনকে ২নং আসামি করা হয়। তিনি ব্রাহ্মণডুরা ইউনিয়নের উলুহর গ্রামের মৃত মুনিম উদ্দিন আহমেদ খুকু মিয়ার ছেলে।

সূত্রে জানা যায়, আলীপুর মৌজার জে.এল. নং-১০২, এস.এ খতিয়ান-১৬৪ এবং দাগ নং ১৩৩ ও ১৯২ আর.এস দাগে  মোট দুই শতক জমির মালিক সাহিদা আক্তার রুনু। দীর্ঘদিন ধরে তার জমি জোরপূর্বক দখলে রেখেছেন হবিগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ফজলে রাব্বি রাসেল। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হলে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ওই জমির উপর ১৪৪ ধারায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার নির্দেশ দেন।

সাহিদা আক্তার পেশাগত কারণে বাইরে থাকায় জমি সংক্রান্ত সব আইনগত কার্যক্রমের জন্য তিনি তার নিকটাত্মীয় জিয়াউর রহমানকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদান করেন। আইনানুগভাবে জিয়াউর রহমান আদালতের আদেশ বাস্তবায়নে ২০ সেপ্টেম্বর রাতে রাসেল মার্কেটের দোকানদারদের স্থিতাবস্থা বজায় রাখার বিষয়টি জানান। এসময় ফজলে রাব্বি রাসেলের ভাড়াটিয়ারা তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।

এরপর ২২ সেপ্টেম্বর রাসেলের খালাতো ভাই নাজমুল ইসলাম বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫-২০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, জসিম উদ্দিন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের হুকুম দেন এবং অস্বীকৃতি জানালে দোকান থেকে বের করে দেন। এমনকি ৭০ হাজার টাকা চুরির অভিযোগও মামলায় তোলা হয়।

তবে ঘটনার রাতের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুরো ভিন্ন চিত্র দেখাচ্ছে। মামলার সময় অনুযায়ী, চাঁদাবাজির ঘটনাটি ঘটে ২০ সেপ্টেম্বর রাত ৮টা ৩০ মিনিটে। অথচ ফুটেজে দেখা যায়, রাত ৮টা ২৪ মিনিটে জসিম উদ্দিন মোটরসাইকেলে নিজ বাড়িতে প্রবেশ করেন। এরপর তিনি বাড়ির উঠোনে আত্মীয়ের সঙ্গে আড্ডা দেন এবং রাত ৯টা পর্যন্ত বাড়িতেই অবস্থান করেন।

প্রশ্ন জাগে-একই সময়ে একজন মানুষ দুটি স্থানে কীভাবে থাকতে পারে? যদি তিনি ৮টা ২৪ মিনিটে বাড়িতে থাকেন এবং রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন, তাহলে ৮টা ৩০ মিনিটে বাজারে গিয়ে চাঁদাবাজি করার অভিযোগ কীভাবে সম্ভব?

রাসেল মার্কেট ও আশেপাশের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার দিন রাতে অলিপুরে বিপুল মানুষ ছিল, দোকানপাট খোলা ছিল এবং আশেপাশে পর্যাপ্ত আলো ছিল। কিন্তু কেউ জসিম উদ্দিনকে ঘটনাস্থলে দেখেননি।

স্থানীয় ব্যবসায়ী হুমায়ুন মিয়া বলেন,“আমরা সবাই দোকানে ছিলাম, কিন্তু জসিম ভাইকে ওই রাতে একবারও দেখিনি। কেউ চাঁদার কথা বলেনি।”

স্থানীয়রা আরও দাবি করেছেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে পরিকল্পিতভাবে জসিম উদ্দিনকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাদের মতে, এটি সামাজিক প্রভাব হ্রাস ও চলমান জমি মামলায় ভিন্নমুখী চাপ সৃষ্টি করার একটি চক্রান্ত।

জসিম উদ্দিনের ছোট ভাই মিজান উদ্দিন মোহন বলেন, “আমার ভাই একজন সৎ ও সম্মানিত ব্যবসায়ী। তিনি সমাজসেবার সঙ্গে জড়িত। ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমি প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটন করে আমার ভাইকে মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি দিন।”

এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কান্ত নাথ বলেন, ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত চলমান থাকায় এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে তদন্তে যা সত্য ও সঠিক প্রমাণিত হবে, তার ভিত্তিতেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে মামলার দুইজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, বাকিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।