লাখাইয়ে বস্তায় আদা চাষাবাদে দিন দিন কৃষকদের বাড়ছে আগ্রহ
লাখাই উপজেলায় মসলাজাতীয় ফসল আদা বস্তার মাধ্যমে আবাদ একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্যের গল্প হয়ে উঠেছে। একসময় যেখানে এই অঞ্চলে পারিবারিক চাহিদা মেটানোর জন্য সীমিত পরিসরে আদা চাষ হতো, এখন সেখানে আধুনিক পদ্ধতি ও সরকারি সহযোগিতার মাধ্যমে বস্তায় আদা চাষ কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মসলা জাতীয় ফসলের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমার্জেন্সী এসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট (ফ্রিপ)-এর আওতায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
৬ ইউনিয়নে ৬ জন কৃষককে প্রদর্শনীমূলক বস্তায় আদা চাষে সহযোগিতা করা হয়েছে। প্রদর্শনীগুলো সড়কের পাশে স্থাপন করায় কৃষকরা সহজেই তা দেখতে এবং শিখতে পারছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মাহমুদুল হাসান মিজান বলেছেন, লাখাই আদা চাষের জন্য সম্ভাবনাময় এলাকা। বস্তায় চাষ পদ্ধতি এখানকার কৃষকদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। প্রদর্শনীর সফলতা দেখে অন্যান্য কৃষকেরা এতে আগ্রহী হচ্ছেন এবং তারা নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা চাইছেন।
মোঃ বাহার উদ্দিন লাখাই উপজেলার একজন সফল ও উদ্যমী কৃষক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মৌসুমী শাকসবজি ও ভেষজ গুণসম্পন্ন ফসল চাষ করে নিজের জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার চাষাবাদ পদ্ধতি ও পরিশ্রম তাকে একজন উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছে।
মোঃ বাহার উদ্দিন বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী শাকসবজি এবং ভেষজ ফসল চাষ করে আসছেন, যা স্থানীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা পূরণ করে। তার চাষকৃত ফসলের মধ্যে রয়েছে: লালশাক, মূলা, গাজর, টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ঢেঁড়স, করল্লা, ঝিঙে, তরমুজ, শিম, কলমিশাক, দেশী বরবটি, সিম করল্লা, তেলাকুচা, কুলকুচা, মেষ্টাপাতা, তুলসীগাছ, থানকুনি পাতা, মিষ্টি কুমড়া পাতা, এলোভেরা, পুইশাক, কাঁকরোল, দেশী ধনেপাতা, বিলাতি ধনেপাতা, পাটশাক, ডাঁটা।
বাহার উদ্দিন বানিজ্যিকভাবে চাষ করছেন মরিচ, মিষ্টি কুমড়া, পেঁপে, এবং কাঁচকলা, যা তার আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস।
বর্তমানে তিনি তার বসতবাড়ির আশপাশের ছায়াযুক্ত স্থানে ১০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন এবং ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় ৫০ বস্তায় প্রদর্শনী চাষ করেছেন। বস্তায় চাষে রোগবালাই কম হওয়া এবং প্রতিকূল পরিবেশে সহজে স্থানান্তরের সুবিধা তাকে আরও অনুপ্রাণিত করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, বস্তায় চাষ পদ্ধতি তাকে নতুন সম্ভাবনার দিক দেখিয়েছে। আগে মাটিতে চাষ করতে গিয়ে রোগবালাই এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফলন কম হতো। কিন্তু বস্তায় চাষে এসব সমস্যার সমাধান হয়েছে।
মোঃ বাহার উদ্দিন চলতি মৌসুমে বস্তায় আদা চাষের মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন। তিনি তার বসতবাড়ির ছায়াযুক্ত স্থানে ১০০ বস্তায় আদা চাষ করেছেন, যা তার উদ্ভাবনী কৃষি পদ্ধতির উদাহরণ। একই সঙ্গে, ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় মধ্য সিংহগ্রাম সড়কের বুল্লাবাজার এলাকায় ৫০ বস্তায় প্রদর্শনীমূলক আদা চাষ করেছেন।
বস্তায় আদা চাষে সাফল্য অর্জন করা মোঃ বাহার উদ্দিন তার অভিজ্ঞতা থেকে জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তি তার চাষাবাদের ধরন ও ফলাফলে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। পূর্বে, তিনি মাটিতে আদা চাষ করলেও রোগবালাই ও অতিবৃষ্টির কারণে আশানুরূপ ফলন পেতেন না। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রদর্শনী ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি বস্তায় আদা চাষে নতুন সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছেন।
তিনি মনে করেন, বস্তায় আদা চাষ কেবল ফলনই বাড়াচ্ছে না, বরং তার মতো অন্যান্য কৃষকদের জন্য একটি কার্যকর এবং টেকসই সমাধান দিচ্ছে। সরকারি প্রশিক্ষণ ও পরামর্শের মাধ্যমে এ পদ্ধতি আরও জনপ্রিয় করা সম্ভব।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ মাহমুদুল হাসান মিজান জানিয়েছেন, লাখাই একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল বস্তায় আদা চাষের জন্য। এ অঞ্চলের মাটি ও পরিবেশকে মাথায় রেখে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নিয়মিতভাবে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ, প্রশিক্ষণ, এবং প্রদর্শনীমূলক সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
তিনি মনে করেন, এই পদ্ধতিটি লাখাইয়ের মতো বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে অত্যন্ত কার্যকর। বস্তায় চাষের মাধ্যমে কম জায়গায় বেশি ফসল ফলানো সম্ভব, যা কৃষকদের জন্য লাভজনক ও টেকসই। এ ধরনের উদ্যোগ স্থানীয় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।