ঢাকা ০৪:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চীনের ঋণ আসা বন্ধ, পদ্মা রেল প্রকল্পে বিশাল ভর্তুকির শঙ্কা

চেকপোস্ট ডেস্ক::

পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে চীনের ঋণ ছাড় আটকে গেছে। একাধিকবার চিঠি ও বৈঠকের পরও চীন সাড়া দিচ্ছে না বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র। এ অবস্থায় চূড়ান্ত পর্বের অর্থ ছাড় না হলে প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হতে পারে সরকারকে।

গত ২ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, ভ্যারিয়েশনের আওতায় অতিরিক্ত খরচের পুরো টাকা ঋণ হিসেবে না পেলে প্রকল্প ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে।

প্রকল্পের আওতায় ভ্যারিয়েশন বাবদ ঋণচুক্তিতে ৪২.৩৮ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ ছিল, যার সমপরিমাণ টাকায় ৩৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু এই খাতে খরচ হয়েছে প্রায় ১,০৮০ কোটি টাকা। ফলে চুক্তির বাইরে বাড়তি ৭০০ কোটির বেশি টাকার বোঝা সরকারের কাঁধে চেপে বসার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই বাড়তি খরচের পেছনে রয়েছে কারিগরি ও নীতিগত সিদ্ধান্তজনিত পরিবর্তন। যেমন-নতুন আন্ডারপাস নির্মাণ (যেমন: টিটিপাড়ায়), অতিরিক্ত রেললাইন, রেলসেতু এবং লেভেল ক্রসিং গেট সংযোজন, ভাঙ্গা জংশনে পরিকল্পনার বাইরে কাজ।

চীনের এক্সিম ব্যাংক এখন এসব অতিরিক্ত ব্যয়ের অর্থ ঋণের আওতায় না আনার অবস্থানে রয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান (যেটিও চীনা) এখন প্রায় ১,৯৭২ কোটি টাকার বিলের অপেক্ষায় আছে। অর্থ ছাড় না হওয়ায় এসব বিলও আটকে গেছে। ফলে প্রকল্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ—যেমন টিটিপাড়ার আন্ডারপাস, লুপ লাইন, ভাঙ্গা জংশনের নির্মাণ—দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

চুক্তি অনুযায়ী ঋণ নিষ্পত্তির সময়সীমা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে সমঝোতা না হলে ঋণের বাকি অংশ আর পাওয়া যাবে না। উল্লেখ্য, চূড়ান্ত পর্যায়ে ঋণচুক্তির ২৬০ মিলিয়ন ডলার থেকে ব্যয় কমায় সরকার ১৬০ মিলিয়ন ডলার ফেরত দিয়েছে। তবে বাকি ১০০ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের এমন অনাগ্রহের পেছনে কূটনৈতিক টানাপোড়েন বা রাজনৈতিক সমীকরণ ভূমিকা রাখতে পারে। বুয়েটের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, “আমরা চুক্তি করার সময় যথাযথ দক্ষতার পরিচয় দেই না। জি-টু-জি প্রকল্পে অনেক কিছুই দুই দেশের সম্পর্কে নির্ভর করে সহজ বা কঠিন হয়ে যায়।”

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন,“ঋণদাতা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটোই চীনের। আমাদের কাজ প্রায় শেষ। আশা করছি, শেষ মুহূর্তে হলেও ঋণের টাকা ছাড় হবে। না হলে ঠিকাদার বিপাকে পড়বে।”

প্রায় ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেল চলাচল শুরু হয়েছে। চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে এখন ঋণছাড়ের অনিশ্চয়তায় যেমন সরকারের কাঁধে বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি ঝুলে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত কাজ।

ট্যাগস :

নিউজটি টাইম লাইনে শেয়ার করুন

আপলোডকারীর তথ্য

চেকপোস্ট

Checkpost is one of the most popular Bengali news portal and print newspaper in Bangladesh. The print and online news portal started its operations with a commitment to fearless, investigative, informative and unbiased journalism.
আপডেট সময় ০১:০৯:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫
৫৩৫ বার পড়া হয়েছে

চীনের ঋণ আসা বন্ধ, পদ্মা রেল প্রকল্পে বিশাল ভর্তুকির শঙ্কা

আপডেট সময় ০১:০৯:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫

পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে চীনের ঋণ ছাড় আটকে গেছে। একাধিকবার চিঠি ও বৈঠকের পরও চীন সাড়া দিচ্ছে না বলে জানিয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র। এ অবস্থায় চূড়ান্ত পর্বের অর্থ ছাড় না হলে প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হতে পারে সরকারকে।

গত ২ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে জানানো হয়, ভ্যারিয়েশনের আওতায় অতিরিক্ত খরচের পুরো টাকা ঋণ হিসেবে না পেলে প্রকল্প ব্যয় সরকারকে বহন করতে হবে।

প্রকল্পের আওতায় ভ্যারিয়েশন বাবদ ঋণচুক্তিতে ৪২.৩৮ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ ছিল, যার সমপরিমাণ টাকায় ৩৩৪ কোটি টাকা। কিন্তু এই খাতে খরচ হয়েছে প্রায় ১,০৮০ কোটি টাকা। ফলে চুক্তির বাইরে বাড়তি ৭০০ কোটির বেশি টাকার বোঝা সরকারের কাঁধে চেপে বসার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এই বাড়তি খরচের পেছনে রয়েছে কারিগরি ও নীতিগত সিদ্ধান্তজনিত পরিবর্তন। যেমন-নতুন আন্ডারপাস নির্মাণ (যেমন: টিটিপাড়ায়), অতিরিক্ত রেললাইন, রেলসেতু এবং লেভেল ক্রসিং গেট সংযোজন, ভাঙ্গা জংশনে পরিকল্পনার বাইরে কাজ।

চীনের এক্সিম ব্যাংক এখন এসব অতিরিক্ত ব্যয়ের অর্থ ঋণের আওতায় না আনার অবস্থানে রয়েছে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান (যেটিও চীনা) এখন প্রায় ১,৯৭২ কোটি টাকার বিলের অপেক্ষায় আছে। অর্থ ছাড় না হওয়ায় এসব বিলও আটকে গেছে। ফলে প্রকল্পের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ—যেমন টিটিপাড়ার আন্ডারপাস, লুপ লাইন, ভাঙ্গা জংশনের নির্মাণ—দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

চুক্তি অনুযায়ী ঋণ নিষ্পত্তির সময়সীমা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে সমঝোতা না হলে ঋণের বাকি অংশ আর পাওয়া যাবে না। উল্লেখ্য, চূড়ান্ত পর্যায়ে ঋণচুক্তির ২৬০ মিলিয়ন ডলার থেকে ব্যয় কমায় সরকার ১৬০ মিলিয়ন ডলার ফেরত দিয়েছে। তবে বাকি ১০০ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের এমন অনাগ্রহের পেছনে কূটনৈতিক টানাপোড়েন বা রাজনৈতিক সমীকরণ ভূমিকা রাখতে পারে। বুয়েটের যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, “আমরা চুক্তি করার সময় যথাযথ দক্ষতার পরিচয় দেই না। জি-টু-জি প্রকল্পে অনেক কিছুই দুই দেশের সম্পর্কে নির্ভর করে সহজ বা কঠিন হয়ে যায়।”

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসেন বলেন,“ঋণদাতা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটোই চীনের। আমাদের কাজ প্রায় শেষ। আশা করছি, শেষ মুহূর্তে হলেও ঋণের টাকা ছাড় হবে। না হলে ঠিকাদার বিপাকে পড়বে।”

প্রায় ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত রেল চলাচল শুরু হয়েছে। চীনের এক্সিম ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে এখন ঋণছাড়ের অনিশ্চয়তায় যেমন সরকারের কাঁধে বাড়তি অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি ঝুলে যাচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত কাজ।