রামপালে ভুয়া ডাক্তারের অপচিকিৎসায় ঝুঁকিতে শতাধিক মানুষ
বাগেরহাটের রামপাল উপজেলায় চিকিৎসা খাতে নেমে এসেছে চরম অব্যবস্থা ও অনিয়মের কালো ছায়া। উপজেলার বাঁশতলী ইউনিয়নের গিলাতলা বাজারে দীর্ঘদিন ধরে ‘ডাক্তার’ এস. এম. ফরহাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তি এমবিবিএস বা বিএমডিসি অনুমোদিত ডিগ্রি ছাড়াই চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি শুধু সাধারণ চিকিৎসাই করছেন না, বরং নিজেকে সার্জারি ও ট্রমা বিশেষজ্ঞ দাবি করে অস্ত্রোপচার পর্যন্ত পরিচালনা করছেন।
স্থানীয়রা জানান, ফরহাদ হোসেনের কাছে গেলে সামান্য জ্বর, সর্দি কিংবা মাথা ব্যথার মতো সাধারণ রোগের জন্যও রোগীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় উচ্চ মাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক। চিকিৎসাবিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী এমন ওষুধ ব্যবহারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন হলেও তিনি তা করছেন নির্বিচারে।
চেম্বারের বাইরে ঝুলছে বড় সাইনবোর্ড, যেখানে তিনি দাবি করছেন অর্থোপেডিক্স, ট্রমা, সার্জারি, মেডিসিন, শিশু রোগ, ডায়াবেটিস, রক্তচাপসহ নানা জটিল রোগের চিকিৎসায় অভিজ্ঞ। এমনকি তিনি নিজেকে হাঁড় ভাঙা, বাতজ্বর, চোখের সমস্যা, জন্মগত বিকলাঙ্গতা থেকে শুরু করে মাইনর অপারেশনেও পারদর্শী বলে প্রচার করছেন।
এতে করে এলাকার অসহায় ও দরিদ্র মানুষ চিকিৎসার আশায় তার কাছে ছুটে এসে প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। ভুল চিকিৎসা ও ওষুধ ব্যবহারের কারণে অনেক রোগী পড়ছেন গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ও অযাচিত ব্যবহার রোগীর শরীরে ওষুধ প্রতিরোধ ক্ষমতা (রেজিস্ট্যান্স) তৈরি করে। এতে ভবিষ্যতে একই রোগের চিকিৎসা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় রোগ নিরাময় প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়।
রোগ নির্ণয়ে সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করে এলোমেলো প্রেসক্রিপশন দেওয়ার কারণে এসব রোগীকে পরবর্তীতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কাছেও সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
অভিযুক্ত এস. এম. ফরহাদ হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, “আমি বিএমডিসি সনদপ্রাপ্ত, তাই ডাক্তার লিখি। আমার চিকিৎসায় রোগীরা ভালো হয়। ভিজিটও কম নেই। এটা কোনো অপরাধ নয়।”
তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিনি মূলত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (SACMO) পদে কর্মরত ছিলেন, যা দিয়ে নিজেকে ‘ডাক্তার’ পরিচয় দেওয়ার কোনো অনুমতি নেই।
এ বিষয়ে রামপাল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুকান্ত কুমার পাল বলেন, “বিএমডিসি আইন অনুযায়ী, এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রি ছাড়া কেউ নামের আগে ‘ডাক্তার’ লিখতে পারবেন না। কেউ যদি এমনটি করেন, তিনি আইনগত জবাবদিহির মুখোমুখি হবেন।”
স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, যদি স্বাস্থ্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করত, তাহলে এ ধরনের ভুয়া চিকিৎসকদের দৌরাত্ম্য অনেক আগেই বন্ধ হতো।











