মোংলায় আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবসে নদী রক্ষার আহ্বান
মোংলায় আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে বক্তারা খুলনা বিভাগের ৩৭টি সংকটাপন্ন নদী রক্ষার আহ্বান জানান। শুক্রবার (১৪ মার্চ) সকাল ৭টায় মোংলা ও পশুর নদীর মোহনায় নদী পরিদর্শন ও নদীতে অবস্থান কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। “আমাদের নদীগুলো, আমাদের ভবিষ্যত”—এই স্লোগানকে সামনে রেখে ধরিত্রী রক্ষায় আমরা (ধরা), সুন্দরবন রক্ষায় আমরা ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপারের উদ্যোগে এ কর্মসূচি আয়োজিত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র সমন্বয়কারী ও পশুর রিভার ওয়াটারকিপার মো. নূর আলম শেখ। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ মো. সেলিম। এছাড়া পরিবেশযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, ধরা’র নেতা গীতিকার মোল্লা আল মামুন, নারীনেত্রী কমলা সরকার, সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’র নাজমুল হক, পরিবেশকর্মী ইদ্রিস ইমন, নদীকর্মী হাছিব সরদার, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার ভলান্টিয়ার ডলার মোল্লা ও মেহেদী হাসান বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যক্ষ মো. সেলিম বলেন, “বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ। তবে জলবায়ু পরিবর্তন, উজানের দেশগুলোর পানি প্রত্যাহার, দূষণ, দখল, অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে নদীগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।”
নারীনেত্রী কমলা সরকার বলেন, “রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণের ফলে সুন্দরবনের নদ-নদীর মাছে বিষাক্ত পদার্থ পাওয়া যাচ্ছে, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। তাই নদী ও সুন্দরবন রক্ষায় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি।”
সভাপতির বক্তব্যে মো. নূর আলম শেখ বলেন, “শিল্প বর্জ্য, প্লাস্টিক বর্জ্য, জাহাজি বর্জ্য এবং কৃষি রাসায়নিকের কারণে নদীর দূষণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলীয় নদীগুলোর পানি ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে, যা কৃষি ও সুপেয় পানির সংকট বাড়াচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গঙ্গার পানি প্রবাহ হ্রাস এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুন্দরবনের নদীগুলোতে লবণাক্ততা বাড়ছে, যা ম্যানগ্রোভ বন ধ্বংসের অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে।”
বক্তারা আরও বলেন, দেশে এমন কোনো নদী নেই যা দখলদারদের লোভের শিকার হয়নি। খুলনা বিভাগের ১৩৮টি নদীর মধ্যে ৩৭টি সংকটাপন্ন, যার মধ্যে ২১টি নদী প্রবাহ হারিয়েছে এবং ৭টি আংশিক প্রবাহমান রয়েছে। এছাড়া বিষ দিয়ে মাছ নিধনের ফলে সুন্দরবনের জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য চরম হুমকির মুখে পড়েছে।
আয়োজক সংগঠনগুলো নদী রক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বলেন, প্রশাসনিক উদ্যোগ এবং জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি করে নদী রক্ষা করা সম্ভব। এ জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।